Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

খাল-বিল ও নদী

নদ-নদী: ফুলছড়ি  ইউপিতে তিনটি নদী রয়েছে যথাক্রমেঃ তিস্তা, বহ্মপুত্র ও সরাই নদী। নদীগুলোর দৈর্ঘ্য মোট 

১৫কিলোমিটার, তিস্তা ৫ কিলোমিটার, বক্ষ্রপুত্র নদী ৭ কিলোমিটার, সরাই (ছোট নদী) ৩ কিলোমিটার। বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের ফলে কখনো কখনো উক্ত নদী গুলোর বিভিন্ন পরিবর্তন হয়ে থাকে। 

দী ভাঙ্গন

নদী ভাঙ্গন বাংলাদেশের একটি নিয়মিত দূর্যোগ। নদী ভাঙ্গনে ক্ষয়ক্ষতি ধীরে ধীরে হলেও অন্যান্য আকস্মিক ও প্রলয়ঙ্করী দূর্যোগ অপেক্ষা অধিক ধংসাত্মক ও সুদূর প্রসারী। 

  • নদী ভাঙ্গনের কারণঃ প্রাকৃতিক 
  • নদী ভাঙ্গনের কারণঃ মানবসৃষ্ট 
  • সমাজ জীবনে নদী ভাঙ্গনের ফলাফল
  • সম্ভাব্য নদীভাঙ্গন মোকাবেলায় প্রস্ত্ততিসমূহ
  • নদী ভাঙ্গন সম্পর্কে যা জানা দরকার

নদী ভাঙ্গনের কারণঃ প্রাকৃতিক 

  • বাংলাদেশ একটি পলি গঠিত বদ্বীপ ভূমি হওয়ায় এখানকার ভূমি নদীর পানির ধাক্কায় বা সামান্য তোড়ে অতি সহজেই ভেঙ্গে যায়।
  • মাটির গঠন দুর্বল বিধায় সামান্য চাপ বা আঘাতে নদীর পাড়ে ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অকস্মাৎ বন্যার প্রভাবে অতি দ্রুত গতির বা আকস্মিক নদী ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • বর্ষাকালে বা বন্যার সময় নদীতে পানির পরিমান বৃদ্ধি পায়, ফলে বর্ধিত পানির চাপে নদীর পাড়ে ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • ঢেউয়ের আঘাতেও অনেক সময় নদীর পাড়ে ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • যেখানে যেখানে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে, সেখানে সৃষ্ট বাঁকে নদী ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • নদী অনেক শাখায় বিভক্ত হয়ে গেলে, মধ্যস্থিত চরসমূহের পাড়ে ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • নদীর আকারও ভাঙ্গনের একটি কারণ, কেননা বড় নদীতে ভাঙ্গন বেশী হয়।
  • নদীর পাড়ে নিচের দিকে অবস্থিত নরম পলি মাটি পানির ধাক্কায় ধাক্কায় গলে যাবার ফলে নিচের দিকে ফাঁপা সৃষ্টি হয় এবং উপরের শক্ত মাটি প্রথমে ধ্বসে গিয়ে পরে ভেঙ্গে পড়ে।
  • নদী ভরাট হয়ে যাবার কারণে পানি বৃদ্ধির সময় পাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয় এবং পাড় ভাঙ্গতে থাকে।
  • নদীতে জোয়ার-ভাটার কারণে সৃষ্ট পানি চলাচলের প্রভাবে ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • নদীতে নতুন চর সৃষ্টি বা অন্য কোন প্রাকৃতিক কারণে নদীর স্বাভাবিক গতিপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে স্রোত বৃদ্ধি পেলে পানিতে যে বলয় বা গোলা সৃষ্টি হয় তার প্রভাবেও নদী ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলেও অনেক সময় নদীতে ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
 
  

নদী ভাঙ্গনের কারণঃ মানবসৃষ্ট 

  • নদীর মাঝখানে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করে নদীর গতি রুখতে চেষ্ট করার ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকায় নদীর পাড় বা জমি খানিকটা ছেড়ে দিয়ে অথবা নদীর পাড় থেকে অনেকটা ভিতরে গিয়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধমূলক বা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের কারণে নদী ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • অপরিকল্পিত রাস্তা-ঘাট ও বাঁধ নির্মাণ করে মৌসুমী বর্ষার পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে নদীতে পানির চাপ বাড়ে এবং ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
  • মানুষ কর্তৃক কৃত্রিম উপায়ে অযৌক্তিকভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টার ফলস্বরূপ নদী ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • শহর রক্ষার উদ্দেশ্যে নদীর এক পাড়ে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করে ভাঙ্গন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে অপর পাড়ে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়।
  • নদীর উৎস মুখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে হঠাৎ হঠাৎ অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেয়ার ফলে নদীর পাড়ে আকস্মিক ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • স্লুইস গেট নির্মান করে পানি নিয়ন্ত্রণের নামে পানি আটকে দেয়ার ফলে পানির চাপ বৃদ্ধির কারণে নদীর পাড়ে ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • চর-ভূমির গাছ ও কাঁশ বন নিধনের ফলে চরের পাশ দিয়ে ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
  • ফেরী বা জাহাজ চলাচলের কারণেও অনেক সময় নদী ভাঙ্গন হয়।
  • অযৌক্তিক ড্রেজিং বা নদী খননের ফলেও নদী ভাঙ্গন হয়ে থাকে।
 
  

সমাজ জীবনে নদী ভাঙ্গনের ফলাফল

  • নদী ভাঙ্গন বেকারত্ব ও দারিদ্রতার প্রসার ঘটায়।
  • নদী ভাঙ্গনের ফলে ভূমিহীনতা বৃদ্ধি পায়।
  • ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অভাবের তাড়নায়, ষড়যন্ত্রমূলক প্ররোচনায় কিংবা অন্যের চাপের মুখে অবশিষ্ট জমি-জমা, গবাদি-পশু এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী হাতছাড়া করে ফেলে।
  • অনেক পরিবার/মানুষ অতি মাত্রায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
  • ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতিতে পতিত হয়।
  • খাবার পানি ও পয়ঃ পরিচ্ছন্নতার তীব্র সংকট দেখা দেয়।
  • নারীদের ব্যক্তিগত বা দৈহিক নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয় এবং নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পায়।
  • বহুসংখ্যক লোক কর্মসংস্থান লাভের বা বেঁচে থাকার আশায় এলাকা ত্যাগ করে শহর বা অন্য কোন স্থানে অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়ে চলে যায়।
  • বৃদ্ধ, নারী ও শিশূদের মাঝে ভিক্ষা বৃত্তির প্রসার ঘটে।
  • লেখা-পড়া বাঁধাপ্রাপ্ত হওয়া এবং স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বহু ছেলে-মেয়ে একবার স্কুল ছেড়ে গেলে আর স্কুলে ফিরে আসতে পারে না, ফলে জনসংখ্যায় অশিক্ষিতের হার বেড়ে যায়।
  • শত শত বা হাজার হাজার মানুষ বাঁধ বা শহরের বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হয়।
  • নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিশুরা বাঁধ বা বস্তির জীবনে প্রতিকূল পরিবেশ ও অনাকাঙ্খিত পারিপার্শ্বিকতার মাঝে নিক্ষিপ্ত হয়।
  • গণ-দারিদ্র ব্যাপকভাবে পুষ্টিহীনতার প্রসার ঘটায়।
  • শিশু শ্রম ও শিশু নির্যাতন বৃদ্ধি পায়।
  • নারী ও শিশু অপহরণ ও পাচার বৃদ্ধি পায়।
  • কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পায়।
  • স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সহ নানা ভাবে পারিবারিক সম্পর্ক বা বন্ধন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • বাঁধ, বস্তি বা অন্যান্য স্থানের অস্বাভাবিক পরিবেশের প্রভাবে, নদী ভাঙ্গনে দুর্গত নারী ও কিশোরীরা প্রকাশ্য বা গোপন পতিতাবৃত্তির শিকার হয়।
  • চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি, প্রভৃতি অপরাধ বৃদ্ধি পায়।
  • নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সামাজিক অবস্তানের চরম অবনতি ঘটে।
  • বিবাহ বিচ্ছেদ, স্বামী বা স্ত্রী কর্তৃক পরিবার পরিজন পরিত্যাগ, বহু বিবাহ ইত্যাদি নেতিবাচক ঘটনা বৃদ্ধি পায়।
  • পরিবারের সদস্যদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহমর্মীতা শিথিল হয়ে পড়ে।
  • নদীতে ভেঙ্গে যাওয়া জমি জেগে উঠলে তা দখলের প্রতিযোগিতায় লড়াই, সন্ত্রস এবং মামলা-মোকদ্দমা বৃদ্ধি পায়।
  • নদী ভাঙ্গনে আন্তর্জাতিক সীমানা পরিবর্তনের ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠী বৈষয়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণের মাঝে আশ্রয়হীনতা বৃদ্ধি পায়।
  • চলমান ভাঙ্গন প্রক্রিয়ায় বাঁধ ও বস্তিতে মানবেতর জীবনের প্রসার ঘটতেই থাকে।
  • স্থানীয় অর্থনীতিতে মন্দাগ্রস্থতা সৃষ্টি হয়।
  • দেশের সার্বিক উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • দেশের সার্বিক পরিবেশ ও প্রতিবেশের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
 
  

সম্ভাব্য নদীভাঙ্গন মোকাবেলায় প্রস্ত্ততিসমূহ

  • পার্শ্ববর্তী নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে
  • স্বেচ্ছাসেবক দলের মাধ্যমে রাতে ও দিনে পালাক্রমে নদীভাঙ্গনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে
  • নদীর পারে ফলজ ,বনজ, ও মাটির ক্ষয়রোধকারী গাছ লাগাতে হবে ।
  • অপরিকল্পিত নির্মানকাজ বন্ধ করতে হবে ।
  • নদীর কিনারে ফেরি ও জাহাজের গতি নিয়ঢন্ত্রন রাখতে হবে
  • নদীর পাড়ে বসতবাড়ি তৈরি করলে সহজে সরানো যায় এরকম বাড়ি তৈরী করতে হবে ।  

নদী ভাঙ্গন সম্পর্কে যা জানা দরকার

  • নিজস্ব এলাকার নদী ভাঙ্গনের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে।
  • আপনার এলাকায় নদী ভাঙ্গনের পরিমাণ ও ব্যাপকতা কেমন সে সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে ।
  • আপনার এলাকায় নদী ভাঙ্গনের কারণ সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে।
  • আপনার এলাকায় নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা ও ব্যাপকতা বাড়তে পারে কি না সে বিষয়ে জেনে রাখতে হবে।
  • আপনার এলাকায় নদী ভাঙ্গন কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং কতদিন পর্যন্ত চলতে পারে সে সর্ম্পকে জেনে রাখতে হবে
  • আপনার এলাকায় নদী ভাঙ্গনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে আরও বিশদভাবে জেনে রাখতে হবে।
 
  

পরামর্শের জন্য যোগাযোগঃ 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি (স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ)

অথবা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রানালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান ভবন (৪র্থ তলা), ৯২-৯৩ মহাখালী বা/এ , ঢাকা -১২১২, ফোন: ০২৮৮৫৯৬৩৭ , dmb@btcl.net.bd

তথ্য সংগ্রহ  

১.রহমান , মুহাম্মদ সাইদুর , দূর্যোগকোষ , ২০০৯, সার্বিক দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচী (সিডিএমপি) , ৯২-৯৩ মহাখালী , ঢাকা -১২১২ ।      

২.কাফী , শরীফ এ, নদী ভাঙ্গনের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে জনগন কি কি ব্যবস্থা নিতে পারে, ১৯৯৩, প্যাক্ট-বাংলাদেশ / প্রিপ, বাড়ী-৫৬, রোড-১৬, ধানমন্ডি আ/এ , ঢাকা, বাংলাদে